পানি দূষণের কারণ প্রভাব ও প্রতিরোধ
পানি দূষণ কাকে বলে : পানি দূষণের প্রধান কারণ হল মানুষের কর্মকাণ্ড। মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে পানিতে বিভিন্ন ধরনের দূষক পদার্থ মিশে পানি দূষিত হয়। পানি দূষণের প্রধান কারণগুলো হল:
গৃহস্থালি বর্জ্য: মানুষের মলমূত্র, রান্নাঘরের বর্জ্য, গোসল ও কাপড় ধোয়ার পানি ইত্যাদি গৃহস্থালি বর্জ্যের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়।
কলকারখানার বর্জ্য: কলকারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন বর্জ্য পানিতে ফেলে দেওয়া হলে পানি দূষিত হয়। কলকারখানার বর্জ্যে সাধারণত রাসায়নিক পদার্থ, ভারী ধাতু, তেল, চর্বি ইত্যাদি থাকে।
কৃষি ও পশুপালন: কৃষি ও পশুপালনের কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক, গোবর, প্রস্রাব ইত্যাদি পানিতে মিশে পানি দূষিত করে।
বন্যপ্রাণীর বর্জ্য: বন্যপ্রাণীর মলমূত্র, খাদ্যের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি পানিতে মিশে পানি দূষিত করে।প্রাকৃতিক কারণ: প্রাকৃতিক কারণ যেমন বন্যা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি ইত্যাদির ফলেও পানি দূষিত হতে পারে।
পানি দূষণ প্রতিরোধ
গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: গৃহস্থালি বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করলে পানি দূষণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। কলকারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেললে পানি দূষণ রোধ করা যায়।কৃষি ও পশুপালনে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদির ব্যবহার কমিয়ে আনলে পানি দূষণ প্রতিরোধ করা যায়। বন্যপ্রাণীর বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করলে পানি দূষণ প্রতিরোধ করা যায়।প্রাকৃতিক কারণে পানি দূষণ হলে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে, বন্যা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।পানি দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। প্রত্যেক ব্যক্তিকে পানি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং পানি দূষণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে।
পানি দূষণের ৫টি ক্ষতিকর প্রভাব
- মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: দূষিত পানি পান করলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যেমন কলেরা, আমাশয়, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি। এসব রোগের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়।
- পরিবেশের উপর প্রভাব: দূষিত পানিতে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু হয়। ফলে জলজ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। দূষিত পানিতে মাছ, কাঁকড়া, শামুক, চিংড়ি ইত্যাদি জলজ প্রাণী মারা যায়। ফলে মানুষের খাদ্যের উৎস হ্রাস পায়।
- অর্থনীতির উপর প্রভাব: দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন শিল্প ও কৃষি কাজে ক্ষতি হয়। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে শিল্পের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়। কৃষি জমিতে দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে ফসলের ফলন কমে যায়।
- পর্যটন শিল্পের উপর প্রভাব: দূষিত পানির কারণে সমুদ্র সৈকত, নদী, খাল-বিল ইত্যাদির সৌন্দর্য নষ্ট হয়। ফলে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হয়।
- পরিবেশগত ভারসাম্যের উপর প্রভাব: দূষিত পানির কারণে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা ইত্যাদি। দূষিত পানির কারণে পরিবেশগত ভারসাম্যের উপর প্রভাব
পানি দূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা। পানি দূষণ রোধে সবার সচেতনতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
পানি দূষণের কারণ ও প্রতিকার
আমরা কিভাবে পানি দূষণ রোধ করতে পারি : পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি: মানুষের মলমূত্র, রান্নাঘরের বর্জ্য, রাস্তার ময়লা-আবর্জনা প্রভৃতি পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিশোধিত করে জলাশয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধন: শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো: কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে।
ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা: নদী, খাল-বিল, পুকুর ইত্যাদিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: পানি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
দূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা। পানি দূষণ রোধে সবার সচেতনতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
আরো জানতে ক্লিক করুন- বিশুদ্ধ পানির বৈশিষ্ট্য কি / ভোটার স্থানান্তর অনলাইন আবেদন / পুরাতন ভোটার আইডি কার্ড চেক এবং স্মার্ট কার্ড সেবা অ্যাপ / আফগানি পামির কোলা / মুদ্রাস্ফীতি কিভাবে হয় এবং মুদ্রাস্ফীতি হলে কি হয়?